কালার সাইকোলজি (Color Psychology) কী এবং এটি কীভাবে আপনার ডিজাইনে কাজে লাগতে পারে

কালার সাইকোলজি (Color Psychology) কী এবং এটি কীভাবে আপনার ডিজাইনে কাজে লাগতে পারে

কালার সাইকোলজি (Color Psychology) কী এবং এটি কীভাবে আপনার ডিজাইনে কাজে লাগতে পারে

 

রঙ

আমরা সবাই রঙ চিনি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় “রঙ কি?” তাহলে উওরে বলা যায় – রঙ হল আলোর একটি অংশ যা মানুষ দেখতে পায়। আমাদের চোখ শুধুমাত্র প্রতিফলিত রঙগুলোই দেখতে পায়। রঙের আবেগ প্রকাশের ক্ষমতা আছে।

প্রধানত তিন ধরনের রং আছে। যথা-

১। Primary বা প্রাথমিক রঙঃ

প্রাথমিক­­­­ রঙ হল লাল, হলুদ এবং নীল। এই তিনটি মৌলিক রঙ সবার উপরে।

২। Seconday বা মাধ্যমিক রঙঃ

সেকেন্ডারি রঙ হল সবুজ, কমলা এবং বেগুনি। এই মাধ্যমিক রঙ গুলো দুটি প্রাথমিক রঙের মিশ্রণে তৈরি হয়। যেমনঃ হলুদ ও নীল রঙ মিলে তৈরি হয় সবুজ রঙ।

৩। Tertiary বা প্রশাখা রঙঃ

টারশিয়ারি রঙ গুলো হল হলুদ-কমলা, লাল-কমলা, লাল-বেগুনি, নীল-বেগুনি, নীল-সবুজ এবং হলুদ-সবুজ। একটি প্রাথমিক রঙ ও একটি মাধ্যমিক রঙ মিলে এই টারশিয়ারি রঙ তৈরি হয়।

এছাড়াও আরো অনেক ধরনের রঙ রয়েছে—

১। Analogous বা সাদৃশ্যপূর্ণ রঙ:

সাদৃশ্যপূর্ণ রঙ হলো একটি রঙের গ্রুপ যেখানে তিনটি রঙ থাকে। আর এই রঙ তিনটি কালার হুইলে একে অপরের পাশে থাকে।

২। Complimentary বা পরিপূরক রঙঃ

পরিপূরক রঙগুলি হল কালার হুইলে একে অপরের বিপরীত দিকে অবস্থিত দুটি রঙ। উদাহরণস্বরূপ, লালের পরিপূরক রঙ সবুজ, এবং হলুদের পরিপূরক রঙ বেগুনি।

৩। Warm & Cool বা উষ্ণ এবং শীতল রঙঃ

  • উষ্ণ রঙ — যেমন লাল, হলুদ এবং কমলা। এই রঙগুলো উষ্ণ অনুভূতি জাগায়। এরা সক্রিয় রঙ অথবা উজ্জ্বল রঙ নামেও পরিচিত।

 

  • শীতল রঙ — যেমন নীল, সবুজ এবং বেগুনি। এই রঙগুলো এক ধরনের শীতল অনুভূতি জাগায়। এরা নিষ্ক্রিয় রঙ অথবা নিরপেক্ষ এবং নিঃশব্দ রঙ নামেও পরিচিত।

 

কালার সাইকোলজি

 

সাইকোলজি শব্দটির অর্থ মনোবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞান হল আবেগ এবং আচরণ সম্পর্কিত এক ধরনের বৈজ্ঞানিক পড়াশোনা। যা অনুভূতি এবং চিন্তা সহ জানা এবং অজানা বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে।

গ্রাফিক ডিজাইনে বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজি রয়েছে যেমনঃ কালার সাইকোলজি, শেপ সাইকোলজি, লাইন সাইকোলজি এবং ফন্ট সাইকোলজি ইত্যাদি যেগুলো একটি সুন্দর ডিজাইন তৈরিতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে।

কালার সাইকোলজি বা রঙ মনোবিজ্ঞান হল “রঙ মানুষের অনুভূতি এবং আবেগের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে” সে বিষয়ে পড়াশোনা বা জ্ঞান। কালার সাইকোলজি দর্শককে ডিজাইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে সাহায্য করে। গ্রাফিক ডিজাইনে কালার সাইকোলজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেনাকাটার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ৯০%-এর বেশি শুধুমাত্র ভিজ্যুয়াল দিক বিবেচনা করা হয়।

 

গ্রাফিক ডিজাইনে কালার সাইকোলজির যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

১। ডিজাইনে রঙের সংখ্যা এবং পরিমাণঃ

দর্শকরা কীভাবে আপনার ডিজাইন গ্রহণ করবে তা আপনার ব্যবহৃত রঙের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। ডিজাইনে রঙের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।

প্রয়োজনে আপনি একটি বা দুটি রঙ কিংবা এর একাধিক রঙও ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই কোন রঙ কি অনুপাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

২। রঙের অর্থঃ

প্রতিটা রঙের নিজস্ব কিছু অর্থ থাকে। প্রকৃতি থেকে একটা রঙ বেছে নিয়ে এর সাথে সম্পর্কিত অনুভূতি গুলো সম্পর্কে ভেবে দেখা যাক। উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, আকাশের রঙ নীল যা শান্ত, সতেজের প্রতীক।

এভাবে প্রতিটি রঙ-ই আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। তাই সব রঙ সব ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী নয়। ডিজাইন অর্থপূর্ণ করতে ডিজাইনে রঙ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

প্রধান ১০টি রঙের অর্থঃ—

১। লালঃ লাল রঙ জীবন, স্বাস্থ্য, শক্তি, যুদ্ধ, সাহস, রাগ, প্রেম এবং ধর্মীয় উচ্ছ্বাস সহ অনেক কিছু প্রকাশ করে থাকে।

২। গোলাপীঃ গোলাপী রঙটিকে প্রেম, দয়া এবং নারীত্বের সাথে সম্পর্কিত একটি শান্ত রঙ বলে ধরা হয়।

৩। হলুদঃ এটি সুখের রঙ। এছাড়াও এটি আশাবাদ, আলোকিতকরণ এবং সৃজনশীলতা, সূর্যালোক এবং বসন্ত এর প্রকাশক। এছাড়াও হলুদ রঙের কিছু নেতিবাচক দিক হলো কাপুরুষতা, বিশ্বাসঘাতকতা, অহংবোধ এবং পাগলামি। উপরন্তু, হলুদ সতর্কতা এবং শারীরিক অসুস্থতাও বোঝায়।

 ৪। নীলঃ এটি সমুদ্র এবং আকাশের রঙ। এটি প্রশান্তি, স্থিতিশীলতা, অনুপ্রেরণা, প্রজ্ঞা বা স্বাস্থ্যের প্রতীক। এটি শান্ত এবং নির্ভরযোগ্যতারও প্রতীক। কিছু কিছু দেশের সংস্কৃতিতে নীল মানে দুঃখ-হতাশাও হতে পারে।

৫। বেগুনিঃ বেগুনি নীল রঙের শান্ত স্থিতিশীলতা এবং লাল রঙের উত্তেজিত শক্তিকে একত্রিত করে। বেগুনি রঙ প্রায়ই রাজকীয়তা, আভিজাত্য, বিলাসিতা, ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও সম্পদ, সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা, মর্যাদা, মহিমা, ভক্তি, শান্তি, অহংকার, রহস্য, স্বাধীনতা এবং জাদুও বোঝায়।

৬। কমলাঃ কমলা আনন্দ এবং সৃজনশীলতার রঙ। এছাড়াও আনন্দ, উষ্ণতা, তাপ, রোদ, উদ্যম, সৃজনশীলতা, সাফল্য, উৎসাহ, পরিবর্তন, সংকল্প, স্বাস্থ্য, উদ্দীপনা, সুখ, মজা, উপভোগ, ভারসাম্য, স্বাধীনতা, অভিব্যক্তি এবং মুগ্ধতা প্রকাশ করে।

৭। সবুজঃ সবুজ প্রায়শই প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক বিশ্বের প্রতীক। এটি শান্তির প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করা হয়। সবুজ রঙের সাথে অন্যান্য সাধারণ সম্পর্ক হল অর্থ, সৌভাগ্য, স্বাস্থ্য, হিংসা এবং পরিবেশ সচেতনতা। কিছু ক্ষেত্রে, সবুজ শারীরিক অসুস্থতাও বুঝিয়ে থাকে।

৮। বাদামীঃ বাদামী এমন একটি রঙ যা প্রায়ই স্থিতিস্থাপকতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা প্রকাশ করে। বাদামী রঙ হলো একাকীত্ব, বিষণ্ণতা এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি।

৯। সাদাঃ সাদা বিশুদ্ধতা বা নির্দোষতা প্রকাশ করে। সাদা রঙ দ্বারা পরিচ্ছন্নতা, সতেজতা এবং সরলতা বোঝায়। 

১০। কালোঃ কালো মন্দ, অন্ধকার, রাত এবং হতাশার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি এমন একটি রঙ যা নিশ্চিততা এবং কর্তৃত্ব প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয়। আবার সাদার বিপরীতেও এই রঙ ব্যবহার করা হয়।

৩। কালার কম্বিনেশনঃ

ডিজাইনে একাধিক কালার ব্যবহার ডিজাইনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন রঙগুলো একে অপরের সাথে এবং ডিজাইনের সাথে খাপ খায় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

কালার সাইকোলজির ভিত্তিতে ডিজাইনে এমন রঙ ব্যবহার করা উচিত যা ওই ডিজাইনের মূল মেসেজকে সমর্থন করে এবং সেই সাথে দর্শকের মনোযোগকে আকর্ষণ করে।

চূড়ান্তভাবে আপনার ডিজাইনে ব্যবহৃত রঙের পিছনে অবশ্যই মানে থাকতে হবে। অপরদিকে সব রঙ সবার কাছে অর্থপূর্ণ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে ডিজাইন করতে হবে।

সফল গ্রাফিক ডিজাইনের একটি মূল উপাদান হলো কালার সাইকোলজি এবং প্রতিটি রঙকে কীভাবে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা। একজন ডিজাইনার হিসাবে আপনি যত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, ততো বেশি আপনি সীমার বাহিরে গিয়ে চিন্তা করতে পারবেন। তবে  সেই সাথে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link